সোহেল আহাদ//স্টাফ রিপোর্টার, সময়নিউজবিডি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের সাংস্কৃতিক সংগঠনের অংশগ্রহণ ছাড়াই জেলা প্রশাসক আয়োজিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন হয়েছে। মরণব্যাধী করোনা মহামারীর কারণে গত দুই বছর যাবৎ পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা যায়নি বলে অধীর আগ্রহে এ বছর ১৪২৯ বঙ্গাব্দ পহেলা বৈশাখ উদযাপনের জন্য সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নানান প্রস্তুতি নিলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন সাড়া না পাওয়ায় সংগঠকদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও হতাশা দেখা দেয়। ঘটা করে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের প্রস্তুতি সভায় তিন থেকে চারটি সংগঠন চিঠির মাধ্যমে দাওয়াত পেলেও অন্যান্য সংগঠনের কোন খোঁজ নেই জেলা প্রশাসকের টালিখাতায়। একাধিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও বাঙালি সংস্কৃতি বিভাজনে যারা বিশ্বাস করেন তাদের ঐক্যবদ্ধতা না থাকার কারণে এবং প্রশাসনের না জানার সীমাবদ্ধতার কারণে শহরের অধিকাংশ সংগঠনই প্রশাসনের রোষানলে পড়ে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদস্য সচিব সঞ্জিব ভট্টাচার্য্য বলেন, প্রশাসনের প্রতিবন্ধকতা দূর করা খুবই প্রয়োজন। একের অধিক সংগঠনকে মূল্যায়ন না করার কারণে আজ প্রশাসনের কোন অনুষ্ঠানে শহরে সক্রিয় সংগঠনগুলো প্রশাসনের সাথে ঘেঁষে না। প্রশাসনের এমন স্বজনপ্রীতি ভাবনাগুলো আমাদের সংস্কৃতি অঙ্গনের জন্য খুবই অশনী সংকেত বহন করছে। আমাদেরই এক দুইজন লোক প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। প্রশাসনের উচিত এমন লোকদের কাছ থেকে দূরে সরে এসে শহরের সকল সাংস্কৃতিক সংগঠকদের একত্রিত করা। প্রশাসন যদি এই বলয় থেকে বের হয়ে না আসে তাহলে আমরা আমাদের শৈল্পিক শক্তি দিয়ে তা প্রতিহত করার চেষ্টা করবো। আমরা প্রশাসনের নিকট স্বারকলিপি প্রদান করবো। জেলা খেলাঘর ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক নীহার রঞ্জন সরকার বলেন, প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমরা কেন যাব? যারা মনে করে আমরা সক্রিয় না, তাদের অনুষ্ঠানে যাওয়ার যোগ্যতা আমাদের নেই। তাহলে আমরা কেনই বা যাব? এখন প্রশাসন স্বজনপ্রীতি আচরণ করেন। আগে আমাদের ডাকতেন, এখন আর আমাদের ডাকেন না। তাই আমরাও প্রশাসনের চিপায় চাপায় ঘুর ঘুর করিনা।
সাহিত্য একাডেমির সভাপতি কবি জয়দুল হোসেন বলেন, সাহিত্য একাডেমি ১৯৮৩ সনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে আসছে। প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের মাঠে আমরা আয়োজন করতাম। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সন থেকে সাহিত্য একাডেমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এককভাবে ৭দিনব্যাপী বৈশাখী উৎসব উদযাপন করে আসছে। তিনি জানান, ২০০৮ সন পর্যন্ত সাহিত্য একাডেমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এককভাবে পহেলা বৈশাখ মঙ্গল শোভাযাত্রা করে আসছে। ২০০৯ থেকে প্রশাসন কতর্ৃক মঙ্গল শোভাযাত্রা সূচনা করা হয়। এরপর থেকে আমরা প্রশাসনের সাথে মঙ্গল শোভাযাত্রা করলেও আমরা বিকাল বেলায় সকল সংগঠনের অংশগ্রহণে মঙ্গল শোভাযাত্রা করে আসছি।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রায় সাহিত্য একাডেমি, উদীচী, ভাষা ও সাহিত্য অনুশীলন কেন্দ্র এবং রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ ছাড়া শহরের আর কোন সংগঠন অংশগ্রহণ করেনি যা খুবই লজ্জাজনক। আমাদের সময় স্বল্পতার কারণে অনেক সংগঠনকে চিঠি দিতে পারিনি। জেলা খেলাঘর নামে একটি সংগঠন আছে সেটা আজকে জেনেছি। শহরের কতটি সংগঠন রয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি গত এক বছর সাত মাস এ জেলায় অবস্থান করছি। শহরে কতটি সংগঠন রয়েছে তা আমার জানা নেই। অভিযোগ রয়েছে পহেলা বৈশাখ উদযাপন প্রস্তুতিমূলক সভায় এক সংগঠক উপস্থিত না হয়েও উপস্থাপনা মঞ্চ ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। এ শহরে ঐ ব্যক্তি ছাড়াও আরো অসংখ্য সংগঠন রয়েছে। তারাও উপস্থাপনা করার যোগ্যতা রাখে, তাদেরকে বাদ দিয়ে তাকেই কেন রাখা হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পছন্দ তাই তাকে আমরা উপস্থাপনায় রাখি। তবে তাদের মাঝেও ভেদাভেদ রয়েছে। তাদের মাঝে ভেদাভেদ থাকলে তারা দুজনকে বাদ দিয়ে নতুনদের উপস্থাপনার সুযোগ করে দিন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি অট্ট হাসি দিয়ে কথাটি পাশ কেটে এড়িয়ে যান।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply